কতিপয় পুলিশ ও সাংবাদিক জড়িত, বলছে মালিক সমিতি

অটোটেম্পোতে স্টিকার লাগিয়ে নগর জুড়ে চাঁদা আদায় (পর্ব-১)

Passenger Voice    |    ১২:০১ পিএম, ২০২৩-১২-১৭


অটোটেম্পোতে স্টিকার লাগিয়ে নগর জুড়ে চাঁদা আদায় (পর্ব-১)

মো. জয়নাল আবেদীন ঃ

চট্টগ্রাম নগরীর সিটি গেইট -বারেক বিল্ডিং এলাকায় চলাচলরত ১৩ নং রুটের অটোটেম্পোতে মালিক সমিতির নামে স্টিকার লাগিয়ে প্রতি মাসে একটি মোটা অংকের চাঁদাবাজি করছে একটি গ্রুপ। এই রুটে চলাচলের জন্য বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআরটিএ ১১৮ টি অটোটেম্পোর রুট পারমিট প্রদান করলেও এই রুটে প্রায় ২০০ টির মতো গাড়ী চলাচল করছে। যে সকল গাড়ির রুট পারমিট রয়েছে তাদের কাছ থেকে মাসে ১ হাজার টাকা, যাদের রুট পারমিট নেই সেই সকল অবৈধ যানবাহন থেকে প্রতি মাসে ৩ হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। এই টাকার একটি অংশ নগর ট্রাফিক পুলিশের স্থানিয় টিআই ও সার্জেন্টদের পকেটেও পৌঁছে যায়। 

সীতাকুণ্ড অটোটেম্পো মালিক সমিতির (রেজিঃ নং ১৪২৬) স্টিকার লাগিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এইসব টেম্পো ও ম্যাক্সিমা গাড়িগুলো। বিআরটিএর নির্ধারিত মোটরযানের বাহিরে এতগুলো অবৈধ অটোটেম্পু গুরুত্বপূর্ণ এই রুটে স্টিকার লাগিয়ে চলাচলের ফলে সড়কে ট্রাফিক জ্যাম ও জনভোগান্তি তৈরি হচ্ছে। এছাড়াও অল্প দক্ষ ও অদক্ষ চালকের হাতে চলছে এই গাড়ি গুলো। অনেক চালকে নেই অটোটেম্পো চালানোর ড্রাইভিং লাইসেন্স এমনকি অনেক মোটরযানের নেই ফিটনেস সনদ। ট্রাফিক বিভাগ ও বিআরটিএর জোরালো কোনো অভিযান না থাকায় নিয়ম কানুন ও নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছেন না মালিক ও চালকরা। 

এই রুটে চালদের সাথে কথা বলে জানা যায়,  সীতাকুণ্ড টেম্পো মালিক সমিতি-১৪২৬ স্টিকার গাড়ির সামনে লাগানো না থাকলে এসব স্টিকার ব্যতিত গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে অলংকার পুলিশ বক্সের শহর ও যানবাহন পরিদর্শক অমল। চালকদের দাবী, এর আগে মালিক সমিতি ও পুলিশের যোগসাজশে এই রুটে স্টিকার লাগিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠলে ট্রাফিক পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (পশ্চিম) এর নির্দেশে সেটা বন্ধের ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। মালিক সমিতির প্রকাশ্যে আদায় করা স্টিকার বাণিজ্যের মোটা অংকের চাঁদার সাধারণ মালিক ও শ্রমিকরা কোন প্রকার সহযোগিতা ও আদায়কৃত অর্থের কোন সঠিক তথ্য হিসাব পায়না। চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং মালিক শ্রমিক হয়রানি বন্ধে চলতি বছরের পহেলা অক্টোবর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ বরাবরে অভিযোগ দাখিল করেছিলেন এই রুটের চলাচল করা বেশ কয়েকটি অটোটেম্পোর মালিক ও শ্রমিকরা।  

এই বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাশার ফখরুজ্জামান প্যাসেঞ্জার ভয়েসকে বলেন, আমার এখতিয়ার নেই বিষয়টিতে। এটা সিএমপির অধীনে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

১৪২৬ স্টিকারের রুট পারমিট বিহীন গাড়ির বিষয়ে অলংকার পুলিশ বক্সের টিআই অমল প্যাসেঞ্জার ভয়েসকে বলেন, আমরা প্রতিদিন এই রুটে অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ ১০/১২ টি অটোটেম্পেু আটক করি। অভিযানের সময় গাড়ি গুলো পাওয়া যায় না। ট্রাফিক পুলিশের কাজ হচ্ছে যে গাড়িগুলোর কাগজপত্র ও বৈধ পারমিট আছে কিনা দেখা। যাদের বৈধ কাগজপত্র নেই তারা এখানে চলতে পারবেনা এটাই আমাদের পরিষ্কার কথা। আমি ১৪২৬ বলতে কিছু বুঝিনা কাগজপত্র ঠিক থাকলে গাড়ি চালাবে না থাকলে চলবে না। তবে পুলিশের এই কর্মকর্তা আরো যোগ করেন, এখন হরতাল অবরোধের কারণে শিথিলতা রয়েছে কারণ সরকার বলেছে হরতাল অবরোধে যাতে কিছু গাড়ি চলে। অন্যদিন আমরা অভিযান অব্যাহত রাখি।

চট্টগ্রাম সীতাকুণ্ড অটো-টেম্পু মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল ওয়াহাব প্যাসেঞ্জার ভয়েসকে বলেন, অলংকার ১৩ নং রুটে ১২০টি ম্যাক্সিমা গাড়ি চলাচলের পারমিট রয়েছে। এই রুটে পারমিটের বাইরে অন্য রুটের ১৫০/২০০ গাড়ি চলে। পুলিশ ও সাংবাদিকরা সবাই এটার সঙ্গে জড়িত। শুধু পুলিশের দোষ নাই সাংবাদিকদের যোগসাজশে ও অবৈধ গাড়ি চলে। ১৪২৬ স্টিকার লাগানো রুট পারমিটের বাইরে গাড়ি চলাচলের বিষয়ে পুলিশের সম্পৃক্ততার কথা তিনি স্বীকার করেছেন।

এই বিষয়ে অটো রিক্সা ও টেম্পো শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, অসাধু মালিক সমিতির চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ সাধারণ মালিক-শ্রমিকরা। তাদের দাপটে নাজেহাল আমরা। অবৈধ এবং বৈধ গাড়িতে চাঁদাবাজি ও হয়রানির কারণে আমাদের পারিবারিক হিসাব নিকাশ দিনশেষে শূন্য কৌটায়। এসব অপতৎপরতা বন্ধ নাহলে প্রকৃত মালিকরা পথে নামতে বাধ্য হবে।